পাহাড়পুর। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে তথ্য

ভুমিকা

আজকে হাজির হলাম পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার সম্পর্কে কিছু লেখার জন্য। পাহাড়পুর সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সম্পর্কে তথ্য

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার একটি বৌদ্ধদের ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। যা 300 বছর ধরে তারা ধর্ম শিক্ষা দিয়েছিল। ততকালীন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা যেমন চীন, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, তিব্বত প্রভৃতি দেশের লোকেরা এখানে ধর্ম চর্চা করত। বর্তমানে এটি ধ্বংশপ্রাপ্ত প্রায়। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নওগাঁ জেলায় বদলগাছীতে অবস্থিত।

বর্তমানে “বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন” পরিচালনা করে।


পাহাড়পুর কোথায় অবস্থিত বা পাহাড়পুর বিহাড় কোথায় অবস্থিত?

পাহাড়পুরে ভ্রমন করতে চাইলে অবশ্যয় আপনাকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে। কোথায় যাবেন কি ভাবে যাবেন কোথায় অবস্থিত তা সব কিছুই জানতে পারবেন, দয়া করে সম্পর্ণ পোষ্টটি মনযোগ সহকারে পড়বেন।

পাহাড়পুর বাংলাদেশ রাজশাহী বিভাগে নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। 


পাহাড়পুর কোন জেলায় অবস্তিত?

বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় বদলগাছী থানায় অবস্তিত। পাহাড়পুর যেতে হলে বাস অথবা সিনএনজিতে চড়তে হবে।


পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ইতিহাস

পাহাড়পুরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনাকে ধর্যসহকারে এই আর্টিকেল পড়তে হবে। নিচে এর সংক্ষিপ্ত সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলো।


পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বৌদ্ধবিহার পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম দশকের শুরুর দিকে (781-821) ধর্ম চর্চার উদ্দেশ্যে বৌদ্ধবিহার নির্মান করেন। এটি দক্ষিন হিমোলয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিহার। এটি 300 বছর ধরে বৌদ্ধদের ধর্ম শিক্ষাদান ছিলো। সেই সময় বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের বিখ্যাত ধর্ম চর্চার স্থান ছিলো। এর উচ্চতা 80 ফুট বা 24 মিটার।

গোপালের পূত্র শ্রী ধর্মপাল দ্বিতীয় রাজা সিংহাসন লাভ করার পর 781 থেকে 821 পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন সাহসী এবং নিষ্ঠাবান ধার্মিক রাজা। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম পালন করতেন। তার শ্বাসন আমলে বাংলা ছাড়িয়ে পাকিস্থানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গান্ধার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেন। মহিপাল ও তার পূত্র নয়াপাল র্মত্যুর পর পাল বংশের পতন ঘটতে থাকে। এই সময় বৌদ্ধ বিহারের বেশ ক্ষতি সাধন হয় বলে এনকেই মনে করে। 1889 সালে স্যার অলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথমে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আবিষ্কার করেন। স্যার অলেকজান্ডার কানিংহাম খনন কার্যের সময় বলিহারের রাজা বিরোধিতা করার কারনে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে আবার খনন কার্য শুরু হয়। এত সমস্ত তথ্য বেরিয়ে আসে। 


পাহাড়পুর সম্পর্কে তথ্য

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার পৃথিবীর মধ্যে বড় বিহার। এটি ভারতের নালন্দার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। 1985 সালে ইউনেস্কো বিহারকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি দেয়। প্রায় 300 বছর বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীদের একমাত্র ধর্ম চর্চার স্থান ছিলো। পাহাড়পুর সংলগ্ন এবটি জাদুঘড় আছে। জাদুঘড়ে বিভিন্ন পাথরের মূর্তি আছ।পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পূর্ব নাম ছিল মোসপুর বিহার। বাংলাদেশ পর্যটক কর্পোরেশন বোদ্ধ বিহার পরিচালনা করে। 


পাহাড়পুর কি কি আছে?

পাহাড়পুরে অনেক কিছুই রহয়েছে যেমন:


🔴 পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে 177 টি ঘড় রয়েছে যা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে এই সকল ঘড়ে বসবাস করতেন। 

🔴 এর দৈঘ্য 400 ফুট ও প্রস্থ 350 ফুট।

🔴 এর উচ্চতা 70 ফুট উচুঁ

🔴 একটি জাদুঘড়, একটি রেস্ট হাউজ, ও কয়েকটি প্রসাসন ভবন রয়েছে।

🔴 এই মন্দিরে পূর্বদিকে সত্যপিরের ভিটা ও এর চারদিকে ছোট বড় মন্দির বাস যোগ্য কক্ষ রয়েছে।

🔴 বিহাড়ের দক্ষিন-পূর্ব কোনে স্নান ঘাট রয়েছে। 

🔴 স্নান ঘাট থেকে 12 মি পশ্চিমে একটি ইমারত পাওয়া গেছে যা গন্ধেশ্বরী মন্দির নামে পরিচিত।

🔴 এই বিহারের গায়ে অসংখ্য মূর্তি খোদায করা আছে।

🔴 বিহারের দক্ষিন দিকে 27 মি দক্ষিনে অনেক গুলো স্নাগার ও শৌচাগার ছিলো।

🔴 বিহারের উন্মক্ত স্থনে 46 মি দীর্ঘ একটি নর্দমা ছিলো।

🔴 এখানে অনেক ছোট বড় বাকা কুপ রয়েছে।

🔴 বিহারের ভিতরের দিকে কেন্দ্রীয় মন্দির রয়েছে যা ধ্বংশাবশেষ অবস্থায় রয়েছো এর উচ্চতা 21 মি হলেও এর উচ্চতা ছিলো 30 মিটার। 


পাহাড়পুর কেন নির্মান করা হয়েছিল

পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্ম পাল দেব ছিল বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তিনি ছিলেন সাহসী, সিষ্ঠাবান ও ধর্ম ভিরু। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলো। এই জন্যয় পাহাড়পুরে বৌদ্ধ বিহার তৈরি করেছিলেন। এথানেে এসে সবাই ধর্ম চর্চা করতে পারে। 


পাহাড়পুর জাদুঘর

পাহাড়পুর বৗদ্ধ বিহারে একটি জাদু ঘর রয়েছে। যা ষাটের দশকের দিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর অধীনে জাদুঘরটি নির্মান করা হয়। নওগাঁ থেকে প্রায় 33 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই জাদুঘরে প্রবেশের মূল্য 100 টাকা। এথানে অনেক প্রাচীন যুগের মূর্তি, পোড়ামাটির

আসবাপপত্র ও অন্যান্য অমূল্য দামী জিনিস। এই জাদু ঘরে গেলে যা যা দেখতে পাবেন………

বেলে পাথরের চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের শিলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর কিছু অংশ,

কৃষ্ণ পাথরের দন্ডায় মান গণেষের মূর্তি, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবল হাটির মহারানীর তৈলচিত্র, হরগৌরির ক্ষতিগ্রন্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষী নারায়নের আংশিক মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ ও বেলেপাথরের মনসা মূর্তি।


পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০ টি ব্যাক্য

পাহাড়পুর সম্পর্কে দশটি ব্যাক্য নিচে দেওয়া হল…………

1) পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপাল পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার তৈরি করে।

2) এটি আবিষ্কার করেন স্যার আলেকজান্ডার কালিংহাম।

3) ইউনেস্ক 1985 সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান স্বকৃতী প্রদান করেন।

4) বৌদ্ধ বিহারের পূর্ব নামছিল সোমপুর বিহার।

5) পাহাড়পুর সোমপুর বিহার ছিলো একমাত্র ধর্ম চর্চা কেন্দ্র।

6) 1919 সালে সংরক্ষিত পুরাকৃর্তি হিসাবে ঘোষিত হয়।

7) পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগে নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে অবস্থিত।

8) পাহাড়পরে 300 বছর ধরে ধর্ম চর্চার স্থান ছিল।

9) পাহাড়পুর পালবংশরা দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছিল।

10) পাহাড়পুর 198 টি বাসযোগ্য কক্ষ ছিলো।


পাহাড়পুর সম্পর্কে চারটি ব্যাক্য

1)  পাহাড়পুর বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছীতে অবস্থিত।

2) অষ্টম দশকের শেষের দিকে বা নবম দশকের তদকে পাহাড়পুর বিহারটি নির্মিত হয়।

3) 300 বছর ধরে এথানে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হতো।

4) পাহাড়পুর জনপ্রিই পর্যটন কেন্দ্র।


উপসংহার

অবশেষে বলা যায় পাহাড়পুর পালবংশের সময় ধর্ম চর্চায় বেশি গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি ঐসময় রাজা ধার্মিক এবং নিষ্ঠাবান ছিলেন। 


আশা করি এই লেখা গুলো পড়ে আপনারা উকৃত হয়েছেন। এই তথ্য গুলো এবং পাহাড়পুর সম্পর্কিত ছবি  সংগ্রহ করেছি উইকিপিডিয়া থেকে।

মানুষ মাত্রয় ভূল করে তাই কোকিছু ভূল থাকলে ক্ষমার দৃাষ্টতে দেখবেন ধন্যবাদ। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url