চেক ডিজঅনার মামলার নতুন নিয়ম 2023 ও বিস্তারিত আলোচনা
আজ আপনাদের সামনে আলোচনা করব চেক ডিজঅনার মামলার নতুন নিয়ম ২০২৩ নিয়ে। বর্তমান সমাজে চেক বিষয়ক ঘটনা অহরহ ঘটছে।
আইনের ফাঁক-ফোঁকন থাকায় আসামীরা কোন সাজা পাচ্ছেনা। ভূক্ত-ভূগীরা আরও বেশি ভোগান্তির শিকার
হচ্ছে। তাই চেক ডিজঅনার মামলার নতুন নিয়ম 2023 সংশোধন করা হয়াছে। নিচে তা আলোচনা করা হল। ধর্যসহকারে লেখা গুলো পড়তে থাকেন।
চেক ডিজঅনার কি
ধরুন আপনে একজন ব্যাবসায়িক। আপনে কাস্টমারের কাছে কিছু মাল বিক্রয় করিলেন। কিন্তু কাস্টমার মালের টাকা এক মাস পর দিবে এবং তাতে আপনে সন্মত হলেন। কিন্তু মালের জামানত হিসাবে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর সহ একটি ফাঁকা চেক নিলেন।
শর্তসাপেক্ষে কাস্টমার আর আপনার মালের টাকা পরিশোধ করে নাই এবং যোগাযোগও করে নাই। তাই আপনে চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলেন টাকা উঠাতে। কিন্তু দেখলেন যে ঐ পরিমান টাকা ঐ ব্যাংক একাউন্টে নেই। তখন আপনে ব্যাংক অফিসারের কাছ থেকে লিখিত মেমো নিলেন। এই মেমো ও চেক ফেরত আনার বিষয় কে ডিজঅনার চেক বলা হয়। আপনাকে কি বুঝাতে পেরেছি যে চেক ডিজঅনার কাকে বলে?
🔴 চেকে যে পরিমান টাকা লেখা আছে সেই পরিমান টাকা ব্যাংক একাউন্টে না থাকলে, ব্যাংক ম্যানেজারের নিকট হইতে লিখিত ডকমেন্ট নিতে হবে।
🔴 চেকের তারিখ হইতে ৬ মাসের মধ্যে চেক ডিজঅনার করে নিতে হবে।
🔴 ব্যাংকিং সময় এর মধ্যে চেক ডিজঅনার করে নিতে হবে।
চেক ডিজঅনার হলে কি করবেন
চেক ডিজঅনার হলে প্রথমে আপনার প্রতিপক্ষকে বিষয়টা জানাবেন। জানানোর পরও যদি টাকা পরিশোধ করতে ব্যার্থ হয় তাহলে আপনে আইনের সহায়তা নিতে পারেন। সেক্ষেতে আপনাকে প্রথমে ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার করে নিতে হবে। তারপর আপনের উকিল নোটিশ করবেন। উকিল নোটিশের ৩০ দিনের মধ্যে আবার ব্যার্থ হলে পরবর্তি ৩০ দিনের মধ্যে চেক ডিজঅনার আইনে মামলা করতে হবে।
চেক ডিজঅনার নোটিশ
চেক ডিজঅনার করার পর উকিলের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাঠাতে হবে। এই ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে পরবর্তি ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে মামলা করতে হবে।
চেক ডিজঅনার মামলার নতুন আইন
আগে আইন ছিল চেক ডিজঅনার হলেই তাকে সাজা পেতে হত। কিন্তু নতুন আইনে চেক গ্রহিতাকে প্রোজনীয় কাগজপত্র সহ প্রমান দিতে হবে। তাদের মধ্যে কোন লেনদেনের চুক্তিপত্র থাকতে হবে। কোন বৈধ প্রমান দিতে না পারলে চেক দাতার কোন শাস্তি হবে না। চেক ডিজঅনার হলেই হলেই সাজা নয়। বাদীকে অবশ্যয় পরিপূর্ণ প্রমান দিতে হবে।
চেক ডিজঅনার মামলা করার নিয়ম বা কোথায় দায়ের করতে হবে
চেক ডিজঅনার মামলা চীফ জুডিসিয়াল মাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট আদলতে মামলা দায়ের করতে হয়। মামলা দায়ের করার পর প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধি ২০০ ধারা অনুযায়ী বাদী পক্ষকে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখবে। মামলার সত্যতা থাকলে তিনি মামলাটি প্রস্তুত করে দায়রা আদালতে পাঠিয়ে দিবে। তবে মনে রাখবেন চীফ জুডিসিয়াল মাজিস্ট্রেট বা চীফ মেট্রোপলিটন মাজিস্ট্রেট অধীনে বিচার কার্য হয় না। শুধূ প্রাথমিক যাচায় বাছায় করে। মামলাটি ১৮৮১ এর ১৩৮ ধারায় পরিচালিত হয়।
চেক ডিজঅনার মামলাতে কি কি কাগজ বা ডকমেন্ট জমা দিতে হয়
🔴 বাদীকে ডিজঅনার চেকের ফটোকপি এবং ব্যাংকের লিখিত ডিজঅনার ডকমেন্ট।
🔴 টাকা পরিশোধের চেয়ে নিগাল উকিল নোটিশের ফটোকপি।
🔴 বাদী বিবাদীর মধ্যে ব্যাবসায়িক লেনদেনের বা অন্য কোন লেনদেনের শক্ত নমুনা বা প্রমান
🔴 বিবাদীর নাম ও অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।
🔴 ব্যাংক একাইন্ট সহ চেকের বিবরন এবং ব্যাংকের তথ্য যেমন ব্যাংকের নাম, কোথায় অবস্থিত ইত্যাদি।
🔴 চেকে উল্লেখিত টাকা পরিমান।
🔴 এছাড়া আরও অন্যান্য প্রমান যদি থাকে তা জমা দিতে হবে।
চেক ডিজঅনার মামলা প্রমানিত হলে আসামিকে
🔴 এক বছরের কারাদন্ড হতে পারে
🔴 চেকে বর্ণিত অর্থের তিন গুন জরিমানা বা
🔴 উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
এই ক্ষেত্রে বাদীর পাওনা টাকা ছারা অতিরিক্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হবে। ১৮৮১ এর ১৩৮(২) ধারায় আছে যে উপ ধারা (১) অনুযায়ী যে পরিমান অর্থদন্ড আদায় হয় সেক্ষেত্রে আদায়কৃত অর্থদন্ড চেকে বর্ণিত অর্থ যতদূর পর্যন্ত আদায় কৃত অর্থদন্ড হতে প্রদান করা সম্ভব তা চেকের ধারককে প্রদান করতে হবে। তাহলে বোঝা যায় চেকে বর্ণিত অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ নিতে পারবেনা। অতিরিক্ত টাকা বা জরিমানা সরকারী কোষাগারে জমা হবে।
চেক ডিজঅনার মামলায় আসামী মৃত্যু বরন করলে করনীয়
আসামী মামলা করার আগেই মৃত্যুবরন করলে আর কোন কিছূ করার থাকেনা। মামলা চলাকালীন সময়েও আসামী মৃত্যুবরন করলেও আসামীর উত্তরাধীকারি বা আইনগত প্রতিনিধীর বিরুদ্ধে বাদী মামলা চালাতে পারেনা।
তবে বাদী আসামীর উত্তরাধীকারি বা আইনগত প্রতিনিধীর বিরুদ্ধে দেওয়ানীর আদালতে টাকার মামলা করতে পারে।
চেক ডিজঅনার মামলার আপিল
চেক ডিজঅনার মামলায় আপিল করা যাবে ১৩৮ ধারায়। কোথায় আপিল করতে হবে ১৩৮ থেকে ১৪১ ধারায় কোথাও বলা হয়নি। এতএব মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে আপিল বিধান গ্রহন যোগ্য হবে।
১৩৮ ধারায় দায়রা জজের নিকট আপিল করা যাবে। তবে অবশ্যয় মনে রাখতে হবে যে আপিল করতে গেলে আসামীকে চেক ডিজঅনারে উলেখিত টাকার সর্বনিম্ন ৫০% টাকা বিচারিক আদালতে জমা দিতে হবে আপিল আদালতে নয়।
রিভিশন দায়ের সময়সীমা এবং নিস্পত্তি
বিচারিক আদালতে রায় ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে রিভিশন দায়ের করতে হয়। ১৯০৮ সালের তামাদি আইনে ১৫৫ অনুচ্ছেদে লেখা আছে বিচারিক আদালতে রায় ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে ফৌজদারী আপিল করতে হবে। রিভিশন দায়ের ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য হবে। ফৌজদারী ৪৪২ক(2) ধারায় বলা আছে নোটিশ জারির ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশন আদালতে মামলা নিস্পত্তি করতে হবে। দায়রা জজের নিকট রিভিশন দায়ের করা হলে, দায়রা জজ যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটাই চূরান্ত সিদ্ধান্ত। অথ্যাৎ দ্বিতীয় বার আর কোন সুয়োগ থাকবে না।
শেষ কথা
আশা করি চেক ডিজঅনার মামলা সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারনা দিতে পেরেছি। চেক ডিজঅনার একটি বড় অপরাধ। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকবেন। এই ধরনের মামলায় জরাবেন না। সময়মত লেন দেন করবেন। এত সম্পর্ক ভাল থকে। চেক দিয়ে কার সাথে জালিয়াতি করবেন না। অপরাধ থেকে দূরে থাকব সুনাগরিক হিসাবে বাঁচব। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন। থন্যবাদ
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: চেক ডিজঅনার মামলা করতে পাবে না ব্যাংক
উত্তর: কোন ব্যাংক আর চেক ডিজঅনার মামলা করতে পাবে না হাইকোর্ট এই রায় দেয়। তবে অর্থ ঋন আদালতে মামলা করতে পারবে। ঋণ এর বিপরীতে ব্লাংক চেক নেওয়া এক ধরনের অপরাধ।
প্রশ্ন: চেক ডিজঅনার কি
উত্তর: ব্যাংক অফিসারের লিখিত মেমো সহ চেক ফেরত আনাকে চেক ডিজঅনার বলে।
প্রশ্ন: চেক ডিজঅনার মামলার শাস্তি
উত্তর: চেক ডিজঅনার মামলায় রায় ঘোষনা হলে আসামি এক বছর কারাদন্ড বা চেকে উল্লেখিত টাকার পরিমানের তিন গুন অর্থ দন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
প্রশ্ন: চেক ডিজঅনার নোটিশ
উত্তর: চেক ডিজঅনার করে নিয়ে উকিলে মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে উকিল নোটিশ পাঠাতে হবে।