চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা

মানুষের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজন খাদ্য। আর এই খাদ্য থেকে পেয়ে থাকে পুষ্টি। পুষ্টি মানুষকে শক্তি জোগায়।

চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা

তাই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন পুষ্টি জাতীয় খাবার। ঠিক তেমনি পুষ্টি গুন সম্পন্ন খাবার চিয়া সিড। চিয়া সিড এর অনেক গুন রয়েছে। চিয়া সিড হাটে বাজারে এবং যে কোন মুদির দোকানে খোজ করলে পেয়ে যাবেন। নিচে চিয়া সিড সম্পর্কে বিস্তারিত আলাচনা তুলে ধরলাম।

চিয়া সিড কি

চিয়া সিড এক ধরনের বীজ। এটি দেখতে তিলের দানার মত। এটি শস্যের মধ্যে পড়লেও এটি ভেজস জাতীয় খাবার। চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এটি মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকো মরুভূমিতে বেশি জন্মায়। চিয়া সিড আকারে ছোট হয় কিন্তু পানিতে ভেজালে ভাতের মত বড় দেখায়। 


আরও পড়ুন>

লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা

কাজু বাদামের পুষ্টিগুন


চিয়া সিড এর পুষ্টি গুন

চিয়া সিড কে বলা হয় সুপারফুড। এত রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুন যেমন ওমেগা-৩, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, আয়রণ এবং আরও রয়েছে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। অনেকেই চিয়া সিড সম্পর্কে ভালো জানে না। আশা করি এই আর্টিকেলটি মনোয়োগ সহকারে পড়লে মোটামুটি  চিয়া সিড সম্পর্কে ধারনা লাভ করবেন।  



চিয়া সিড কি ভাবে খেতে হয়

চিয়া সিডের নিজস্ব কোন স্বাদ নেই তাই যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। যেমন সালাদ, জুস বানিয়ে , শরবত বানিয়ে, সবজির সাথে, এমনকি দই এর সাথে মিশিয়েও খাওযা যায়। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম হিসাবে আপনে সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিড খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। চিয়া সিড খাওয়ার আগে অবশ্যয় ঠান্ডা পানি বা হালকা গরম পনিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। 

চিয়া সিড কি ভাবে খায় এতক্ষনে আপনে বুঝে গেছেন। 


চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ডাক্তারেরা নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ারর পরামর্শ দেন। চিয়া সিডে প্রচুর পুষ্টি থাকায় দেহের জন্য অত্যান্ত দরকারী একটি ভেজস খাবার। অপকারিতার চাইতে উপকারিতা অনেক বেশি। নিচে চিয়া সিডের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো


চিয়া সিড এর উপকারিতা

  ১/ হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে: চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন দুই চামচ করে খেলে হৃদ রোগের ঝুঁকি থাকে না। 


২/ রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে: চিয়া সিডে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া উচিত। 


৩/ হাড় মজবুত করতে: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। হাড়কে মজবুত রাখতে ক্যালসিয়াম অতি গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ সিয়া সিড খেলে আমাদের হাড় মজবুত থাকবে।


৪/ গ্যাসের সমস্যা হলে: যাদের গ্যাসের সমস্য আছে তারা নিয়মিত সিয়া সিড খেলে গ্যাস চিরতরে পালিয়ে যাবে। এছাড়া শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ পদার্থ বের করে দেয়। 


৫/ ভালো ঘুমের জন্য: যাদের রাতে ঘুম হয় না বা ঘুমের অনিয়ম হয় তারা নিয়মিত সিয়া সিড খাবেন তাহলে সময় মত পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম হবে। 


৭/ ডায়াবেটিস কমাতে: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে চিয়া সিডের ভূমিকা অপরিসীম। যাদের ডায়াবেটিস রোগটি রয়েছে তারা প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ করে সিয়া সিড খাবেন তাহলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে। 


৮/ ওজন কমাতে: ওজন কমাতে চিয়া সিড সহযোগীতা করে। তাই যারা ওজন কমাতে চান আপনারা চিয়া সিড খেতে পারেন। 


চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন অসাভাবিক ভাবে কমতে থাকে। তাই পরিমান মত চিয়া সিড খাওয়া উচিত।


বেশি চিয়া সিড খেলে রক্ত চাপ কমিয়ে দেয়। সুতরাং বেশি চিয়া সিড না খাওয়াই ভালো। 

পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে  চিয়া সিড না খাওয়ায় ভালো।

অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই অতি মাত্রায় না খেয়ে নিয়মিত ও পরিমান মত খাওয়া ভালো।


চিয়া সিড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

চিয়া সিড খেলে এলার্জি হতে পারে। এমনকি শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, আমাশয়, ফুসকুড়ি হতে পারে। তবে ভয় এর কোন কারন নেই। অল্প পরিমান করে প্রতিদিন আপনে খেতে পারেন।এই ধরনের সমস্যা হলে চিয়া সিড খাওয়া বন্ধ করে দিন। সব কিছুরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে চিয়া সিড দেহকে সুস্থ সবল রাখে। 


চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল

চিয়া সিড কিডনির জন্য যথেষ্ট ভাল। কিডনির কোন ক্ষতি করে না। চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন তাই আমাদের চেয়া সিড খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চিয়া সিড কিডনিকে স্বাস্থ বান ও সুস্থ রাখে। যদি মনে করেন যে কিডনির ক্ষতি করে তাহলে আপনার ভূল ধারনা। চিয়া সিড উচ্চ প্রোটিন ও ফাইবার যুক্ত করে। 


কিডনিকে বলা হয় দেহের ছাকনি। তাই আমরা কিডনিকে ভাল রাখার চেষ্টা করব। কিডনিকে সুস্থ সবল রাখেতে গেলে প্রতিদিন নিয়ম করে এক থেকে তিন চামচ করে পানিতে ভিজিয়ে সকালে অথবা রাতে চিয়া সিড খেতে হবে। 


গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া ভালো। কারন চিয়া সিডে রয়েছে আইরণ। আইরণ রক্ত চলাচল এবং রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। চিয়া সিডে প্রচুর পুষ্টি থাকায় গর্ভবতি মায়েরে পুষ্টির অভাব পুরণ করে। ফলে পেটের বাচ্চা সুস্থ সবল থাকে। তবে চিয়া সিড খাওয়ার পর এলার্জির সমস্যা হলে ভাওয়া বাদ দিতে পারেন। 

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন এক চামচ থেকে দেড় চামচ চিয়া সিড নিয়ে হালকা গরম পানি বা ঠান্ডা পানিতে আধা ঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিট ভিজিয়ে রেখে সরবত বানিয়ে বা সরাসরি খেতে পরেন। 


বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এমন এক ধরনের খাবার ছোট থেকে বড় সবাই চিয়া সিড খেতে পারবে। বাচাদের খাওনোর সময় অবশ্যয় সতর্কতা অবলম্বন করবেন কারন গলায় আটকিয়ে যেতে পারে। এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদেরকে না খাওয়ানোই ভাল। যে সকল বাচ্চারা কোন কিছু খেতে চায় না তাদের চিয়া সিড খেতে দিবেন। কয়েকে দিন খেলেই আপনার বাচ্চার মুখে রুচি ফিরে আসবে। 



চিয়া সিড এমন এক ধরনের খাবার যা যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন। বাচ্চাদেরকে খাওয়ানোর সময় ব্লেন্ডারে মিহি করে খাওয়ালে কোন ভয় থাকেনা। ব্লেন্ডারে মিহি করার পর জুসের মত করে নিতে হবে। এর পর ফিডারে ভরিয়ে সামান্ন চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে নিলে বাচ্চারা লোভনীয় আকারে খেয়ে নিবে। 


চিয়া সিড কিভাবে খেলে জন কমে

যদি আপনে ওজন কমানোর কথা চিন্তা করে চিয়া সিড খাওয়া শুরু করেন তাহলে আমি বলব আপনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সত্যিকিার অর্থে চিয়া সিড দেহের ওজন কমিয়ে দেয়। চিয়া সিড সব ভাবেই খেতে পারবেন। জুস বানিয়ে, লেবুর শরবত এর সাথে, পুডিং বানিয়ে, এবং সালাতের সাথে খেতে পারেন। দ্রত ওজন কমানোর জন্য দুই চামচ সিয়া সিড ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ভিজিয়ে নেওয়ার পর লেবুর সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে আপনার পেটের চর্বি ও ওজন কমে যাবে। আমি গ্যারান্টি দিলাম নিয়ম করে খেলে ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এর ফলাফল আপনে নিজেই বুঝতে পারবেন। 


শেষ কথা

চিয়া সিড একটি পুষ্টি গুন সম্পর্ণ খাবার তাই আমি সাজেশান দিব যে প্রতিাদন নিয়ম করে চিয়া সিড খাওয়ার অভ্যায় করুন। কারণ আপনার দেহ সুস্থ সবল ও রোগ মুক্ত থাকবে। ওজন কমাতে এর বাপক চাহিদা রয়েছে। চিয়া সিডের নিজস্ব কোন স্বাদ নেই তাই যে কোন খাবারের সাথে মিশ্রিত করে থেতে পাবেন এবং ঐ খাবারের স্বাদ নষ্ট হবে না। আশাকরি চিয়া সিড সম্পর্কে আপনাদের যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এই পোষ্টটি আপনাদের উপকারে এসছে। 


আপনারা সহযোগীতা করলে আমি আরো উৎসাহ পাব। এই রকম আরো পোষ্ট আনাদের মাঝে শেয়ার করব। যদি কোন কিছু ভূল থাকে  অবশ্যয় ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনার দেহ সুস্থ সবল ও রোগ মুক্ত থাক। ধন্যবাদ। 


প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: চিয়া সিড দাম কত

উত্তর: বর্তমান বাজার অনুযায়ী চিয়া সিড ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে এক কেজি পেয়ে যাবেন। 


প্রশ্ন: চিয়া সিড এর বাংলা

উত্তর: চিয়া সিড এর বাংলা এবং ইংরেজী একই। তবে বাংলাতে আপনের চিয়া বীজ বলে ডাকতে পারেন। 


প্রশ্ন:চিয়া সিড খেলে কি ওজন বাড়ে

উত্তর: চিয়া সিড খেলে ওজনা বাড়ে না। বরং ওজন কমাতে সহযোগীতো করে। 


প্রম্ন: চিয়া সিড কখন খেতে হয়

উত্তর: চিয়া সিড যে কোন সময় খেতে পাবেন। তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং ঘুমানোর আগে চিয়া সিড দুধের সাথে মিশ্রিত করে খেলে ভাল হয়।


প্রশ্ন: চিয়া সিড কি ওজন কমায়

উত্তর: অবশ্যয় চিয়া সিড ওজন কমায়। চিয়া সিড চর্বি কমাতে সাহায্য করে। 


প্রশ্ন: চিয়া সিড কোথায় পাওয়া যায়

উত্তর: চিয়া সিড হাটে বাজারে, রাস্তার ফুট পাতে, মুদি খানার দোকানে অথবা অনলাইনে পাবেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url