ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ভূমিকা
ড্রাগন ফল এক ধরনের ফনীমনসা প্রজাতির ফল। ড্রাগন ফল এর চীনা নাম পিতায়া ফল। তবে ড্রাগন ফল নামে বেশি পরিচিত লাভ করেছে।
এই ফলকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকে যেমন চীনে এর নাম ড্রাগন মুক্তা বা আগুন ড্রাগন, থাইল্যান্ডে ডাকে ড্রাগন স্ফটিক, ভিয়েতনামে ডাকে মিষ্টি ড্রাগন, মালয়েশিয়াতে ডাকে ড্রাগন ফল।
বর্তমানে ড্রাগন ফল বিভিন্ন দেশে চাষ হয়। আমদের বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। আমাদের বাংলাদেশে লাল ড্রাগন বেশি দেখা যায়।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
অন্যান্য ফলের মতই ড্রাগন ফল কাঁচায় খাওয়া যায়। উপর থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিরাপদে খাওযা যায়। ড্রাগন ফল এর উপকারিতা শেষ করা যাবেনা।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো।
ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
🔵 ক্যান্সার নিয়ন্ত্রনে: ড্রাগন ফলে রয়েছে লাইকোপেন, ফ্রি রাডিকেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি যা ক্যান্সারে বিরুদ্ধে লড়ায় করে। ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুন কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
🔵 হজম শক্তি বৃদ্ধিতে: যাদের হজম শক্তি দূর্বল তারা এই ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
ড্রাগন ফলে রয়েছে অলিগোস্যাকারাইডের মত প্রিবায়োটিক যা খাদ্য হজমে গুরত্ব
পূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
🔵 রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধিতে: ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর ভিচামিন সি যা রোগের
বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও তকের সতেজ ভাব ফিরিয়ে আনে।
🔵 চোখের জন্য: ড্রাগন ফলে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন। চোখ ভালো রাখতে
বিটা-ক্যারোটিন সহযোগীতা করে কারন এটি ভেঙ্গে ভিটামিন এ তে পরিণত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৩ থেকে ৬ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন খেতে পরামর্শ দেয়।
🔵 ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমাতে: ড্রাগন ফলকে ডায়াবেটিস এর ইনসুলিন বলা
হয়। ড্রাগন ফল দেহের চিনিকে ভেঙ্গে দেয় ফলে সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
🔵 হার্ট ভালো রাখতে: ড্রাগন ফল হিমোগ্লবিন তৈরিতে সহায়তা করে ফলে রক্ত চলাচলে
সহজ হয়। এছাড়াও ড্রাগন ফলে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৯ এরা হার্টকে ভালো
রাখে।
🔵 বার্ধক্য জনিত ত্বকের জন্য: গবেষনায় দেখা গেছে যে ত্বকের বাধ্যর্ক রোধ
করতে গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে।
🔵 গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা: ড্রাগন ফলে রয়েছে আয়রন যা রক্তের
হিমোগ্লবিন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।তাই গর্ভবতি মহিলাদের জন্য এই
ফল খাওয়া বেশি জরুরী।
🔵 চুলের জন্য: ড্রাগন ফল দুধের সাথে খেলে চুল পড়া কমে যায় এবং চুল নরম ও
চকচকে করে।
🔵 হাড়ের জন্য: যে সকল ব্যাক্তি বহুদিন ধরে হাড়ের ব্যাথা এবং হাড় জনিত বিভিন্ন
রোগে ভোগছেন তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খাবেন তাহলে আপনে ধীরে ধীরে হাড়
জনিত রোগে থেকে মুক্তি পাবেন।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
ড্রাগন ফলের উপকারিতা থাকলেও রয়েছে অপকারিতা। ড্রাগন ফল এর অপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
আরও পড়ুন কাজু বাদামের পুষ্টিগুন
এলার্জি জনিত সমস্যা: যাদের এলার্জি রয়েছে তারা ড্রাগন ফল থেকে দূরে থাকবেন কারন শরীরে এলার্জি বৃদ্ধি হতে পারে যার ফলে শরীরে চুলকানি ও ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। তবে সীমিত পরিমান খেতে পারবেন।
ড্রাগন হতে ডাইরিয়া: যেহেতু ড্রাগন হজম শক্তি বাড়ায় সেহেতু অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খেলে ডাইরিয়া হতে পারে।
মিথক্রিয়া: যারা রেগুলার ঔষধ সেবন করেন তারা অবশ্যয় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ড্রাগন ফল খাবেন। কারন ঔষধের সাথে মিশ্রিত হয়ে ক্ষতি সাধন করতে পারে।
লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা
ড্রগনের জাত হরেক রকমের রয়েছে এর মধ্যৈ লাল ড্রগন ফল এর উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
🔵লাল ড্রাগন দিয়ে রুপ চর্চা করা যায়। লাল ড্রাগ ফল দিয়ে নিয়মিত রুপ চর্চা করলে
ত্বকের রং উজ্বল করে।
🔵দাঁতের মাড়ির রোগ ভালো করতে লাল ড্রাগন খাওয়া ভালো।
🔵হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে লাল ড্রাগন খাওয়া ভালো।
🔵হাড়কে মজবুত করতে লাল ড্রাগন খুব ভালো কাজ করে।
🔵ডায়বেটিস রোগীদের জন্য লাল ড্রাগন খাওয়া অতিব জরুরি কারন এটি ইনসুলিন
হিসাবে কাজ করে।
🔵ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
🔵লাল ড্রাগন খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও পুষ্টি তাই অন্যান্য ফলের সাথে ড্রাগন ফলও নিয়মিত খাওয়া উচিত।
ড্রাগন ফল কি ভাবে কেতে হয় তা হলো ড্রাগ ফলটি কাঁচায় খাওয়া যায়। প্রথমে ফলটি পানি দিয়ে ভালো ভাবে ধূয়ে রিতে হবে। তারপর একটি চাকু দিয়ে উপর থেকে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর আপনার সুবিধামত ফলটিকে বিভিন্ন আকারে টুকরা করতে পারেন। ভেতরের নরম অংশ চামচ দিয়ে খেতে পারেন অথবা জুস আকারে খেতে পারেন।
আরও পড়ুন কাজু বাদাম এর উপকারিতা
দুধের সাথে ভিজিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। অথবা বাদামের সাথে আপনে খেতে পারেন। এছাড়া আপনে সবজির সাথেও খেতে পারেন।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুন ছক আকারে নিচে দেওয়া হলো।
ড্র্রাগন ফল উৎপাদন ভেদে পুষ্টিগুন ভিন্নতা হতে পারে তবে এখানে প্রতি ২৫০ গ্রাম ড্রাগন ফলে আনুমনিক পুষ্টির উপাদান দেওয়া হলো।
ড্রাগন ফলের চাষ দুটি পদ্ধতিতে করা যায়। যেমন বানিজ্যিক ভাবে জমিতে এবং বাড়ির সাদে বা উঠানে টবে গাছ লাগানো যায়।
প্রথমে আপনাকে উর্বর জমি নির্ধারন করতে হবে। সেই জমির চরদিকে ভালো ভাবে বেড়া দিতে হবে। এর পর ১.৫⤯ ১.৫ ⤯ ১ আকারে গর্ত করতে হবে। ২০ থেকে ২৫ দিন খোলা রোদে রাখতে হবে। ২০ থেকে ২৫ কেজি গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ৫০ গ্রাম জিংক এবং ১৫০ গ্রাম জিপমাস দিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর চারটি করে চারা সোজা ভাবে ৫০ সে.মি দূরত্ব রেখে চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের এক মাস পরপর যতদিন চারা ফল দিবে ততদিন ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার দিতে হবে।
টবে ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি
টবে ড্রাগন ফল চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে মজবুত টব ও দোআঁশ মাটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর টবে গোবর, টিএসপি, এমওপি, এবং জিপসাম দিয়ে টপ ভরাট করতে হবে। ১০ থেকে ১৫ দিন পর প্রতিটা টবে দুটি বা তিন চারা রোপন করতে হবে। রোপনর করার এক মাস পর থেকে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম উইরিয়া সার দিতে হবে । নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। নিয়মিত ও সময় মত পরিচর্চা করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
শেষ কথা
আশা করি ড্রাগন ফল সম্পর্কে ধারনা দিতে পেরেছি। ড্রাগন ফল এর পুষ্টিগুন বিবেচনা করে আমরা বাড়িতে ড্রাগন ফল চাষ করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের সকলের উচিত অন্যান্য ফলের সাথে ড্রাগন ফল খাওয়া।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর