প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয়
ভূমিকা
যার প্রাণ আছে তাকে প্রাণী বলে। যে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য তার পূর্ণাঙ্গ বাসস্থান এবং বিলুপ্ত প্রাণীর অস্থিত্ব রক্ষায় ও খাদ্য নিশ্চিত করনে যে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয় তাকে প্রাণী সংরক্ষণ বলে।
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় অনেক কিছু আছে। পৃথিবীতে প্রাণীর অস্তিত্ব না থাকলে মানুষেরও অস্তিত্ব থাকবে না। পৃথিবীতে সকল প্রাণীর সাথে একে অপরের পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা করে। তাই মানুষের জীবণ যাত্রার জন্য প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় কি তা অবশ্যয় বুঝতে পেরেছেন।
আরও পড়ুন
আমরা মানুষ যদি প্রাণীকে ধ্বংশ করে ফেলি তা হলে আমরাও ধ্বংশের দিকে ধাবিত হব। বন উজার করে দিলে বন্য প্রাণী টিকতে পাবে না ফলে তারা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের কর্তব্য তাদের বাঁচিয়ে রাখা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রাণীও সম্পদ। প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় আলোচনা বা বর্ণনা নিচে দেওয়া হল।
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় আলোচনা ও উপস্থাপনা
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষকে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের অসাবধানতার কারনে প্রাণী এখন বিলুপ্তির পথে। আগে যখন আমরা রাস্তা দিয়ে হেটে যেতাম তখন চারপাশে জঙ্গল ও সবুজ গাছপালা দেখতে পেতাম এবং সেই সকল জঙ্গলে অনেক ছোট বড় প্রাণী ঘুড়ে বেড়াত। এই দৃশ্য গুলো দেখতে খুব ভালো লাগত। বর্তমানে চারদিকে তাকালে শুধু ফাঁকা মাঠ ও বাড়ি ঘড় দেখতে পাওয়া যায়।
এভাবে যদি বন জঙ্গল ধ্বংশ হতে থাকে তাহলে প্রাণী কি ভাবে বেঁচে থাকতে পারে? আমাদের উচিত দায়িত্ব সহকারে এদের সংরক্ষণের এগিয়ে আসা।
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় আলোচনা ও উপস্থপন করা হল।
প্রথমত সরকারী ভাবে উদ্যগ গ্রহন করতে হবে। প্রাণী সংরক্ষণে যা যা প্রয়োজন সব কিছুই উদ্যগ গ্রহন করতে হবে। শুধূ তাই নয় আইন এর প্রয়োগ সঠিক ভাবে করতে হবে। জেল জরিমানা প্রয়োজনে মৃত্যুর বিধান করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় মাইকিন এর ব্যাবস্থা করতে হবে। মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রাণী ধ্বংশের কুফল সম্পর্কে সাধারণ নাগরীক বুঝাতে হবে। প্রয়োজনে সরকারী বেসরকারী টিভি চ্যানেলে এ সম্পর্কিত নাটক, ধারা ভাষ্য, সিনেমা, সতর্কী করন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে। এমনকি বিভিন্ন সোসাল মিডিযায় ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে।
প্রয়োজন ছাড়া গাছপালা কাটা যাবে না। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছ লাগাতে হবে। যেখানে সেখানে আবাসিক গড়ে তোলা যাবে না। অপ্রয়োজনীয় ভাবে বন জঙ্গল ধ্বংস করা যাবে না।
সরকারী বা বেসরকারী ভাবে প্রাণীদের আবাস স্থল গড়ে তুলতে হবে। তাদের খাবারের সু ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যে সকল প্রাণী বিলুপ্তি প্রায় তাদের কৃত্রিম প্রজন্ন এর ব্যাবস্থা করতে হবে।
যারা পশু স্বীকার করে বিদেশে পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যাবস্থা নিতে হবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর মোকাবেলার জন্য ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। আধুনিক কলকার খানার দূষিত বর্জ ও পানি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। খিয়াল রাখতে হবে যে পরিবেশের কোন ক্ষতি যেন না হয়।
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় ১০টি উপায়
প্রাণী সংরক্ষণে মানুষের করণীয় কি কি তা ১০টি উপায় নিচে দেওয়া হল।
১. প্রাকৃতিক আবাস স্থল বা বন জঙ্গল ধ্বংশ করা থেকে রিবত থাকতে হবে। প্রয়োজনে বন্য প্রাণীদের কৃত্রিম ভাবে বন তৈরি করে দিতে হবে এবং খাবারের যথাযত সু ব্যাবস্থ করে দিতে হবে।
২. সাধারণ নাগরিক দের বুঝাতে হবে যে অযথা বাড়ির আশেপাশে বন জঙ্গল কেটে পরিষ্কার না করে। এ ফলে ছোট ছোট প্রাণী হারিয়ে যাবে।
৩. কৃষি খাতে কীটনাশকের ব্যাবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যাহারে নদী নালা খাল বিলের মাছ ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।
৪. বন জঙ্গল ও প্রাণী ধ্বংশের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার কুফল সম্পর্কে তুলে ধরে বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ায় তা প্রচার করতে হবে।
৫. বন্য প্রাণী শিকার করা বন্ধ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে এদরে বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যাবস্থা নিতে হবে। বিদেশে পশু পাচার সম্পর্কে আইন স্মৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন থাকেতে হবে।
৬. আধুনিক কলকার খানা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে। কলকার খানার ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
৭. সরকারী ভাবে প্রাণীর উপরে গবেষনাগার তৈরি করতে হবে। ঘবেষনা করে প্রাণীকে টিকিয়ে রাখার নতুন নতুন পদ্ধতি বের করতে হবে।
৮. প্রয়োজনে বিলুপ্ত প্রাণীদের কৃত্রিম প্রজনন এর ব্যাবস্থা করতে হবে। ফলে বিলুপ্ত প্রাণী হারিয়ে যাবে না।
৯. আহত বন্য প্রাণীদের আলাদা পশু হাসপাতাল তৈরি করে দেওয়া উচিত। এতে ভালো চিকিৎসার ফলে আহত পশু-পাখি অকালে মৃত্যু বরন করবেনা।
১০. আন্তর্জাতিক ভাবে উদ্যগ গড়ে তুলতে হবে। যৌথ ভাবে এগিয়ে আসতে হবে বন্য প্রাণী রক্ষায়। প্রয়োজনে বন্য প্রাণী সংরক্ষনে আর্থিক অনুদানে এগিয়ে আসতে হবে।
১১. পশুর চামরা দিয়ে পোশাক তৈরি এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে।
শেষ কথা
প্রাণী সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মধ্যে একতা বদ্ধ গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে পাড়া মহল্লায় প্রাণী সম্পর্কীয় ক্লাব গড়তে হবে। প্রাণী সম্পদ ধীরে ধীরে ধ্বংশ হওয়া কারনে পরিবেশের ভারস্যাম্য রক্ষায় অনেক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকরা যাতে এ ব্যাপারে বুঝতে পারে এর কুফল সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। অতি খড়া অনা বৃষ্টির কারনে বন্য প্রাণী ধ্ংশ হতে পারে। তাই পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।
আশা করি প্রাণী সংরক্ষনের ব্যাপারে আপনাদের বুঝাতে পেরেছি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রাখি। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: বিলুপ্ত প্রাণীর নাম
উত্তর: আমাদের অবহেলার কারনে অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রাণীর নাম হল ডোরাকাটা হায়না, ডাইনোসর, গৌর বা বন্য গরু, কোয়াগ্গা, অরোচস(Aurochs), থাইলাসিন, সাম্বার হরিণ, কাঠবিড়ালী, ডোরাকাটা বিড়াল, প্যারাইল্লা বানর, ডোডো পাখি, গোল্ডেন টোড আত্যাদি।
প্রশ্ন: প্রাণী কাকে বলেে
উত্তর: যার জীবন আছে, খাদ্য গ্রহন করে, বংশ বিস্তা করে, নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পরেনা, উত্তেজনায় সারদিতে সক্ষম, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারে ও নিজের মত প্রকাশ করতে পারে তাকে প্রাণী বলে।
প্রশ্ন:মানুষ কোন শ্রেণীর প্রাণী
উত্তর: মানুষ স্তন্যপায়ী মেরুদন্ড প্রাণী। মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হল হোমো স্যাপিয়েন্স।
প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য
উত্তর: উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে, এদরে ডালপালা, শাখা-প্রশাখা আছে। এরা চলাফেরা করতে পারে না। এদের ফুল ও ফল হয়।
প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে চলাফেরা করতে পারে। এরা যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণীর নাম
উত্তর: বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম হল রাজ শকুন, ডোরাকাটা হায়েনা, মিঠাপানির কুমির, জলার হরিন, শুশুক, বনগরু, ঘড়িয়াল, সুরু ভাল্লুক, কাঠবিড়ালী ইত্যাদি।
প্রশ্ন: বিশ্ব প্রাণী দিবস কবেে
উত্তর: প্রতি বছর সারা বিশ্ব বাপি অক্টবর মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়।