গৃহপালিত পশু কি কি বা গৃহপালিত পশুর নাম এর তালিকা
ভুমিকা
আমাদের প্রয়োজনে গৃহপালিত পশু পালন করে থাকি। গৃহপালিত পশু আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। আদি কাল থেকেই বন্যপশুকে পোষ মানিয়েছে। যখন থেকে বনের পশু পাথি মানুষের অনুকুলে এসেছে তখন থেকেই মানুষের সাথে বনের পশু-পাখির মধ্যে আত্নীয়তার বন্ধন ঘটেছে।
মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে পশুকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করত এবং বর্তমানেও করে। মানুষ যখন চাষাবাদ করা শুরু করে তখন এই গ্রহ পালিত পশুকে ব্যবহার করে ফসল ফলিয়েছে। গরু ও মহিষ চাষাবাদের জন্য ছিল অত্যান্ত প্রয়োজনীয় গৃহপালিত পশু। অতীত ও বর্তমানে গৃহপালিত পশু কি কি তা নিচে বর্ণনা করা হল।
মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে নিজের গৃহে যে সকল পশু পালন করে থাকে তাকে গৃহপালিত পশু বলে। যেমন গরু, মহিষ, কুকুড়, বিড়াল, গাধা ইত্যাদি। গৃহপালিত পশু বলতে শুধু গরু,ছাগল, কুকুড় এই জাতীয় প্রাণীকে বুঝায় না। বনের যে কোন পশুকে পোষ মানিয়ে নিজ গৃহ পালন করলে তাকে গৃহপালিত পশু বলে। যেমন বাঘ, সিংঘ, হাতি, গন্ডার ইত্যাদি।
প্রথম গৃহপালিত পশু কি
ধারনা করা হয় যে ১১০০০ থেকে ৯০০০ পর্যন্ত খৃষ্টপূর্ব থেকে পশু পোষ মানানো শুরু হয়। মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু কোনটি বলতে ভেড়া বা মেষ কে বুঝায়। কারন সেই সময়কার ইরানী মূর্তি দেখে তা প্রমান পাওয়া যায়। তখন ভেড়া বা মেষ দুধ, পশম ও মাংশ উৎপাদনে পালন করা হত। ভেড়ার মাংশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ভেড়া পালনে তাদের আগ্রহ বেশী ছিল।
গৃহপালিত পশুর বৈশিষ্ট্য
গৃহপালিত পশুর বৈশিষ্ট্য হল
(১) এরা সহজেই পোষ মানে।
(২) যে কোন পরিবেশে এরা মানিয়ে নিতে পারে।
(৩) মানুষের কাছে থাকতে এরা পছন্দ করে।
(৪) মানুষের আচার আচরনে তারা সাড়া দিতে পারে।
(৫) এরা সাধারনত স্তন্যপায়ী হয়ে থাকে।
(৬) এরা তৃণভোজী বা মাংশাশী প্রাণীও হতে পারে।
(৭) এরা মানুষের উপকার করে।
(৮) পশু পালন কারীকে এরা সহজেই চিনতে পারে।
(৯) এরা মানুষের আদর যত্নে বড় হয়।
গৃহপালিত পশুর নাম
১) ভেড়া: ভেড়াই একমাত্র প্রথম প্রাণী মানুষ গৃহপালিত পশু হিসাবে পালন করত। ভেড়া থেকে দুধ, মাংস, চামড়া ও পশম পাই। ভেড়া আমাদের অনেক উপকার করে। ভেড়া আমাদের পুষ্টি ও আর্থিক ভাবে সহায়তা প্রদান করে।
২) গরু: গরু হল সবচাইতে দরকারী ও উপকারী প্রাণী। গরুর দুধ, চামড়া ও মাংসের জন্য যেমন বিখ্যাত ঠিক তেমনি ফসল ফলাতে জমি চাষা-বাদের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজনীয় প্রাণী। আগে ফসল ফলানোর জন্য গরুর উপর নির্ভরশীল ছিল।
৩) ছাগল: গৃহপালিত প্রাণী হিসাবে ভেড়ার মত ছগলও প্রাচীন প্রাণী। এরা সহজেই পোষ মানে এবং মানুষের কাছে থাকতে পচন্দ করে। মাংস, দুধ, ও চামড়া উৎপাদনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪) মহিষ: জমি চাষের জন্য গরুর সাথে মহিষও ব্যবহার করত। মহিষের দুধ অনেক পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। আগে ভারি ভরি কোন জিনিস বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য মহিষ ব্যবহার করত। কারন মহিষের গায়ে অনেক শক্তি। মহিষ তৃণভোজী প্রাণী।
৫) ঘোড়া: আগে যখন চলাচলের জন্যে যানবাহন ছিলনা তখন ঘোড়া ছিল একমাত্র গৃহপালিত পশু। দূর দূরান্তে ভ্রমন বা পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহার করত। ঘোড়া খুব দ্রত দৌড়ায়। আগে রাজা বাদশারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঘোড়া ব্যবহার করত।
পাঁচটি গৃহপালিত পশুর নাম
৬) কুকুর: কুকুর কে বলাহয় প্রভুভক্ত প্রাণী। মানুষ বেইমানী করলে কুকুর বেইমানী করে না। কুকুরকে বলা হয় বিসস্ত প্রাণী। ধারনা করা হয় যে প্রায় ১০০০০০ বছর আগে কুকুর মানুষের বশে আসে।
৭) বিড়াল: বিড়াল হল মানুষের গৃহপালিত প্রাণী। ছোট ছোট শিকার করতে এরা খুব দক্ষ। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রে গৃহপালিত পশু হিসাবে বিড়াল ছিল দ্বিতীয় স্থানে। আর যুক্তরাজ্যে ছিল ২৬ %। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২২০ মিলিয়ন মালিকানাধীন এবং ৪৮০ মিলিয়ন বিপদ গামী বিড়াল ছিল।
৮) হাতি: হাতি হল বিশালাকার জন্তু। এর কান গুলো কুলার মত লম্বা হয়। এর লম্বা শুর রয়েছে। হাতির দাঁত অনেক মূল্যবান। হাতি ৬০ থেকে ৭০ বছরের বেশি বাঁচেনা। আগে রাজা বাদশারা হাতি পালন করত।
৯) শূকর: শুকরও গৃহপালিত পশু। বাংলাদেশে যে সকল শূকর গৃহে পালন করা হয় সে গুলো বন্য শূকরের বংশধর। উন্নত জাতের শূকর খামারে পালন করা হয়। বিশেষ করে ইউরোপ দেশ গুলোতে উন্নত জাতের শূকর বাণিজ্যিক ভাবে পালন করা হয়।
১০) খরগোশ: খরগোশ তৃণভোজী প্রাণী। এরা আকারে ছোট হয়ে খাকে। এরা দুই জাতের হয়। খরগোশ এবং বনো খরগোশ। বনো খরগোশ আকারে বড় হয়।
৫টি গৃহপলিত পশুর নাম
১১) গাধা: মাল বহন করার কাজে গাধাকে ব্যবহার করে। গাধা হল ঘোড়ার একটি জাত। গাধা তৃণভোজী প্রাণী। গাধার পিঠে ভারি জিনিস তুলে দিলে তা অতি সহজে বহন করে নিয়ে যায়।
১২) গিনিপিগ: এই প্রাণী দেখতে বড় ইদুরের মত। এরা ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা এক সাতে তিন থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। খৃষ্টপূর্ব ৯০০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত মানুষের গৃহপালিত পশু হিসাবে লালন পালন হত।
১৩) উট: উটকে মরুরদেশে জাহাজ বলা হয়। মরু অঞ্চলে মানুষ গরু ছাগলে বদলে উট পালন করে। উট থেকে মাংস ও দুধ পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় উটের পূর্বপুরুষরা উত্তর আমেরিকাতে জন্ম।
১৪) হরিণ: বর্তমানে হরিণ বিলুপ্ত প্রাণী। হরিণের মাংস খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। হরিণের শিং অনেক উপকারে আসে। হরিণ তৃণভোজী প্রাণী। এদেরকে দেখতে কিছুটা ছাগলের মত লাগে। এরা দ্রত দৌড়ায় এবং সাঁতার কাটে। এরা নরম খাবার বেশী পছন্দ করে।
এগুলো ছাড়াও আরও অনেক গৃহপালিত পশু রয়েছে। মানুষ এখন হিংস্র প্রাণীকেও পোষ মানিয়ে নিচ্ছে। যেমন বাঘ, সিংহ ইত্যাদি।
উপসংহার
মানুষ এখন সকল পশুকে পোষ মানানোর চেষ্টা করছে। আদি কাল থেকেই পশুর উপর মানুষ নির্ভরশীল। কারন পশু মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে যাচ্ছে।বনের পশুকে পোষ মানিয়ে নিজ গৃহে পালন করছে বলেই সেই সকল পশুকে গৃহপালিত পশু বলা হয়। অতীতে হাতি, ঘোড়া, গরু ও মহিষ মানুষের কাছে সবচাইতে দামী গৃহপালিত পশু ছিল।
আমি উপরে আলোচনা করেছি যে গৃহপালিত পশু কি কি। গৃহপালিত পশুর নাম সহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই পোষ্টটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: গৃহপালিত প্রাণী কাকে বলে?
উত্তর:যে সকল প্রাণী মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে প্রাণীকে পোষ মানিয়ে গৃহে লালন পালন করে তাকে গৃহপালিত প্রাণী বলে। গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি।
প্রশ্ন: গৃহপালিত পশুর আবাসন কাকে বলে
উত্তর: অধিক উৎপাদন ও সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পশুকে আশ্রয় প্রদানের জন্য ঘড় তৈরি করা ও পশুর মানসন্মত খাবার নিশ্চিত করা এবং এই সম্পুর্ণ প্রক্রিয়াকে গৃহপালিত পশুর আবাসন বলে।
প্রশ্ন: গৃহপালিত বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম কি
উত্তর: গৃহপালিত বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম হল Felis catus (ফেলিস ক্যাটাস)
প্রশ্ন: মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু কোনটি
উত্তর: ধারনা করা হয় যে ১১০০০ থেকে ৯০০০ পর্যন্ত খৃষ্টপূর্ব থেকে পশু পোষ মানানো শুরু হয়। মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু কোনটি বলতে ভেড়া বা মেষ কে বুঝায়। কারন সেই সময়কার ইরানী মূর্তি দেখে তা প্রমান পাওয়া যায়। তখন ভেড়া বা মেষ দুধ, পশম ও মাংশ উৎপাদনে পালন করা হত। ভেড়ার মাংশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই ভেড়া পালনে তাদের আগ্রহ বেশী ছিল।
প্রশ্ন: গৃহপালিত পশু Meaning in english.
উত্তর: গৃহপালিত পশু Meaning in english হল Domestic Animals.