জমি মাপার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মূল্য পরিচিতি ডিজিটাল সহ
জমি পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করা হত শিকল ও অন্যান্য পুরাতন যন্ত্র ও সোনাতন পদ্ধতি। আগে জমি পরিমাপ করার জন্য সময়েরে অপচয় হত ও কষ্ট কর ছিল। জমি মাপার আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে খুব অল্প সময়ে এবং অতি সহজে জমির পরিমাপ বের করা যায়।
কৃষি কাজে, রাজমিস্ত্রি কাজে ও কাঠমিস্ত্রি কাজে যেমন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় ঠিক তেমনি জমি পরিমাপ করার জন্য যে সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি বাজারে পওয়া যায় সে গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
জমি মাপার যন্ত্রপাতি
১) টেপ ফিতা: এই টেপ ফিতা ১০০ থেকে ১৫০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে অথবা আরও লম্বা পাওয়া যেতে পারে। জমির দূরত্ব বের করার জন্য এই টেপ ফিতার প্রয়োজন হয়। এর কভার সাধারণত প্লাষ্টিকের এবং ফিতা নমর প্লাষ্টিকের হয়। এটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। জিনিসের কোয়ালিটির উপর মূল্য নির্ধারন হয়। ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
২) ইঞ্জিনিয়ারিং স্কেল: যে স্কেলের এক পাশে ফুট স্কেল ও অপর পাশে ভূমি স্কেল থাকে তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কেল বলে। এটি সাধারণত প্লাাষ্টকের হয়ে থাকে। জমির নকশা থেকে শুরু করে অন্যান্য মাপ নিতে এই স্কেল ব্যবহার করা হয়। এর দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
৩) হলুদ গনিয়া ও সাদা গুনিয়া স্কেল: এটি দেখতে হলুদ ও সাদা রং এর হয় এবং আকারে ছোট। এই দুটি স্কেল নকশা পরিমাপ করার কাজে বেশী ব্যবহার হয়। এই স্কেলের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওযা যায়।
৪) ফাইন গুনিয়া: এই স্কেলের এক পাশে গুনিয়ার বড় দাগ এবং অপর পাশে গুনিয়ার ছোট দাগ রয়েছে। এর দাম বাজারে ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
৫) কাটা কম্পাস বা ডিবাইডার: এই যন্ত্রটি লোহার তৈরি হয়ে থকে। এটি একটি খুব গুরত্বফূর্ণ যন্ত্র। স্কেলের মাপ ও নকশার মাপ এবং অন্যান্য সুক্ষ্ন মাপ ঠিক ভাবে নেওয়ার জন্য এই জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। বাজারে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
৬) কম্পাস: এই কম্পাসের দুট কাটা থাকে । একটি উত্তরদিক অন্যটি দক্ষিক দিক। যে কোন অবস্থানে দিক নির্ণয় করা যায়। জমি পরিমাপ করার কাজে এটি ব্রবহার করা হয়। এর দাম ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
৭) ম্যাগনিফাইং গ্লাস: এই যন্ত্র দিয়ে ছোট লেখাকে বড় করে দেখার জন্য ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে। জমি মাপার ক্ষেত্রে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
৮) গ্যান্টার স্কেল: এটি সাধারনত পিতলের হয়ে থাকে। এই স্কেল দুই ধরনের পাওয়া যায়। তিন ইঞ্চ গ্যান্টার স্কেল এর দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এই স্কেল দিয়ে জমি পরিমাপ করার কাজে লাগে। এবং ৬ ইঞ্চি গ্যান্টার স্কেল এর দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পওয়া যায়।
৯) বার ইঞ্চি স্কেল: নকশা থেকে ৪০০০ ফুট দূরত্ব বের করতে এই স্কেল ব্যবহার করা হয়। এর দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা হয়। তবে জিনিস ভেদে এর দাম আরও কম হতে পারে।
১০) স্বচ্ছ গ্যান্টার স্কেল: এই স্কেল দিয়ে নকশার উপর থেকে সরা সরি জমির মাপ বের করা যায়। এর মূল্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হয়।
১১) ডায়াগনাল বা তির্যক স্কেল: এই স্কেল সাধারণত দুই ধরনের হয়। ইঞ্চি ডায়াগনাল ও সেন্টিমিটার ডায়াগনাল স্কেল। যে স্কেল দিয়ে দশমিক এর মাপ বের করা যয় তাকে ডায়াগনাল স্কেল বলে।
১২) একর কম্ব: এটি একটি চৌরা আয়াতাকার স্কেল। ০.২ ইঞ্চি অন্তর অন্তর সুতা টেনে লাইন করা থাকে। এটি সরাসরি নকশার উপর ফেলে প্লটের জমির পরিমাপ নির্ণয় করা হয়। এর দাম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা হয়।
১৩) চাঁদা: দৈঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা, বৃত্ত, ঘনত্ব ইত্যাদি পরিমাপের জন্য চাঁদা ব্যবহার করা হয়। এর দাম ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পারয়া যায়।
১৪) ক্যালকুলেটর: জমি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ ইত্যাদি করার জন্য ক্যালকুলেটরের সাহায্য নেওয়া হয়। এর দাম ১০০ থেকে ২০০০ টাকা বা তারও বেশি দাম হতে পারে।
জমি মাপার ডিজিটাল যন্ত্র
১) লেন্সেটিক কম্পাস: এটি একটি লেন্স সহ ডিজিটাল কম্পাস। এটি দিয়ে থুব সহজেই জমির কোন, লাইন, সমান্তরাল মাপ বের করা যায়। একটি জমির আইল অন্য একটি জমির আইল কত ডিগ্রি অ্যাংগেলে আছে বা কত ডিগ্রি কোন বরাবার আছে তা সহজেই নির্ণয় করা যায়। ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
২) লেজার ডিস্টান্স মিটার: টেপ ফিতা ছাড়াই জমির দূরত্ব বের করতে এই ডিজিটাল মেশিন দিয়ে অতি সহজেই দূরত্ব বের করা যায়। এই মেশিন দিয়ে যে কোন পরিমাপ কনভার্ট করতে পারবেন। যেমন মিটার, সেন্টিমিটা, ফিট, ইত্যাদিতে কনভার্ট করা যায়। ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
৩) ডিজিটাল ভার্ণিয়ার ক্যালিপার: এই যন্ত্র ব্যবহার করে দৈঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা অতি সহজেই নির্ণয় করা যায়। এই যন্ত্রটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। জমির নকশাতে ডিজিটাল ভার্ণিয়ার ক্যালিপার স্কেল ব্যবহার করে জমির দৈঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা নির্ণয় করা যায। ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা মধ্যে পাওয়া যাবে।
৪) ডিজিটাল সার্ভে মেশিন বা লেবেল মেশিন: এক জায়গাতে দ্বারিয়ে থেকে জমির দূরত্ব, উঁচু নিচু ইত্যদি বের করা যায়। এই মেশিনের দাম ২০০০০ থেকে ৫ লক্ষ বা তারও বেশি টাকা হতে পারে।
৫) টেলিস্কোপ ডিস্টান্স মিটার: এই মেশিন দিয়েও কোন স্থানের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। এই মেশিন টির দাম দশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজারের মধ্যেই পাওয়া যায়।
মন্তব্য
দিন যত পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের চিন্তাধারা ততই পরিবর্তন হচ্ছে। দিন দিন উন্নত হচ্ছে সমাজ ব্যববস্থা। আধুনিকতার মান শক্ত হচ্ছে। আগে জমি মাপার জন্য শিকল ব্যবহার করত তা পরর্বিতে টেপ ফিতা এবং আধুনিক যন্ত্র আবিষ্কারে ফলে এক জায়গা থেকেই জমির দৈঘ্য, প্রস্ত, উচ্চতা দূরত্ব, কোন, উচুঁ, নিচু সমান্তরাল ইত্যাদি এক সাথে মাপা যায়। ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে।
আপনারা জমি মাপার আধুনিক যন্ত্র ও ডিজিটাল যন্ত্র সম্পর্কে কিছুটা হলেও জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন এবং যন্ত্র সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করেছে। ডিজটাল যন্ত্রপাতির তালিকা উপরে দেওয়া আছে। আশা করি এই পোষ্টটি আপনার ভাল লেগেছে। সুস্থ থাকেন - ভালো থাকেন ধন্যবাদ।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: কম্পাস কাকে বলে?
উত্তর: কম্পাস একটি যন্ত্র। যার সাহায়্যে যে কোন স্থানে থেকে দিক নির্ণয় করা হয় তাকে কম্পাস বলে। কম্পাসের দুটি কাটা থাকে। একটি উত্তর দিক ও অপরটি দক্ষিন দিক বুঝায়।
প্রশ্ন: জমি পরিমাপের সূত্র
উত্তর: প্রথমে জমির দৈঘ্য ও প্রস্ত বের করতে হবে। জমি সমান না হলে এদের গড় বের করতে হবে। এর পর দৈধ্য ও প্রস্তকে গুন করে ৪৩৫.৬ দিয়ে ভাগ করলেই জমির পরিমাপ বের হবে।
প্রশ্ন: জমি পরিমাপের নিয়ম
উত্তর: প্রথমে জমির দৈঘ্য ও প্রস্ত বের করতে হবে। জমি সমান না হলে এদের গড় বের করতে হবে। এর পর দৈধ্য ও প্রস্তকে গুন করে ৪৩৫.৬ দিয়ে ভাগ করলেই জমির পরিমাপ বের হবে।
প্রশ্ন: জমি মাপার যন্ত্রপাতি কোথায় পাওয়া যায়
উত্তর: ওনলাইন কিছু ওয়েবসাইডে অথবা সরাসরি আপনার নিকটস্থ বাজারে খোজ করলে অথবা ইলেকট্রিক দোকানে খোজ করলে পাওয়া যাবে।